কেন উদ্যোক্তা হবেন
চাকরির তুলনায় উদ্যোক্তা হওয়া অনেক কঠিন। চাকরির ক্ষেত্রে মাস শেষে বেতনের নিশ্চয়তা থাকে। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলাে আরাে ঈর্ষনীয় অফার দিয়ে থাকে। সে তুলনায় উদ্যোক্তা হওয়া সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ। মাস শেষে কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়। ঠিকমত প্রােডাক্ট বা সেবা বিক্রির টেনশন মাথায় নিতে হয়। সার্ভিসে সমস্যা দেখা দিলে ক্রেতার কাছ থেকে কথা শুনতে হয়। এত সমস্যা মাথায় রেখেও অনেকে উদ্যোক্তা হতে চায়। কারণ, একজন উদ্যোক্তা তাই করতে পারে, যা সে ভালবাসে। ইচ্ছেমত নিজের সৃজনশীলতা প্রকাশ করতে পারে। নিজের সৃজনশীলতা বিকশিত হয়, এমন উদ্যোগ সে নেয়। নিজের উদ্যোগের পেছনে রাত-দিন সে এক করতে পারে। নিজের সমস্ত শক্তি ব্যবহার করে কাজ করতে সে পছন্দ করে। সে মনে করে, সবকিছুই সম্ভব। সে মানুষকে জবাবদিহি করতে পছন্দ করে না। অন্য প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্র, রাজনীতি, আমলাতন্ত্রে সে মাথা ঘামাতে চায় না।
সাহসে অটল থাকুন
আপনার চারপাশে হাজারাে উদ্যোগ দেখতে পাবেন। সকালে আপনার ঘুম ভেঙে যায়। তারপর থেকে খেয়াল করুন। আপনি একটি বেডে ঘুমান। বেডের নিচে খাট রয়েছে। বেডের পাশে একটি সাইড টেবিল রয়েছে। এ ধরনের প্রতিটি কাজের জন্য এক বা একাধিক ব্যক্তি জড়িত। কেউ পণ্য তৈরি করছে। কেউ পণ্য আপনার কাছে হাজির করে দিচ্ছে। এ পণ্য বেচাকেনা, সরবরাহ, সেটআপ নিয়েই বিভিন্ন উদ্যোগ দেখতে পাবেন। কিছু উদ্যোগ প্রতিষ্ঠিত। কিছু উদ্যোগ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। আবার কিছু উদ্যোগ বিভিন্ন কারণে বাজারে টিকে থাকতে পারছে না। আপনি ভালভাবে বাজারে নামলে আপনার ব্যবসার কারণে অনেকের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আবার কঠিন বাজারের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আপনি হয়ত দাঁড়াতে পারেননি। আপনার ভেতরেও দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে।
আপনি লাভ-ক্ষতি মিলিয়ে হিসেব করতে বসলেন, আপনি যে ব্যবসা করছেন, সে ব্যবসা টেনে নিয়ে যেতে পারবেন কিনা। নাকি অন্য কোনাে ব্যবসা করবেন? চলতি ব্যবসার সাথে অন্য ব্যবসা যােগ করবেন? নাকি লােকসানের ভার বইতে না পেরে আপনি ব্যবসা গুটিয়ে ফেলবেন। নানারকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা বৈরি আবহাওয়ার কারণে আপনি নতুন করে হিসাব নিকাশ করবেন। নতুন মার্কেটিং পরিকল্পনা সাজাবেন। যেসব ভুল ছিল, তা শুধরে নিয়ে নতুন উদ্যমে কাজ করবেন। ঝড় আসলেও উদ্যোক্তারা থেমে থাকেন না। তারা সে প্রতিকূলতা অতিক্রম করে এগিয়ে যান। অনেকসময় তারা ব্যবসায় লােকসান গােণে। একটি উদ্যোগ ব্যর্থ হলে তারা অন্য উদ্যোগ নেয়। আশ্চর্য মনােবলের অধিকারী ব্যক্তিরাই সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হন। তাই কোনাে উদ্যোগ নিলে সাহসে অটল থাকুন।
উদ্যোক্তার ঘুম
একজন উদ্যোক্তা ঘুম থেকে উঠে চিন্তা করে, সে ১০০ ভাগ সঠিক পথেই যাচ্ছে। কিন্তু দিন শেষে দেখা যায়, তার কাছে এমন একটি তথ্য এসেছে, যা তাকে নতুন করে ভাবায়। নতুন সিদ্ধান্ত নিতে অনুপ্রাণিত করে। সে তার প্রতিষ্ঠানের গতিপথ নিয়ে নতুন করে ভাবে। নিজেই নিজের বাস্তবতায় পৌছায়। একদিন-দুইদিন নয়, প্রতিদিনই একজন উদ্যোক্তার এভাবে ঘুম ভাঙে। গতকালের চিন্তার সাথে আজকের চিন্তার এভাবে ফারাক হয়ে যায়।
উদ্দেশ্য ঠিক করুন
আপনার উদ্যোগ ছােট হােক বা বড় হােক, আপনি একটি উদ্দেশ্য ঠিক করুন। সে উদ্দেশ্য কোথাও লিখুন। এতে আপনার কোম্পানি কী ধরনের কাজ করবে, তা বােঝা যাবে। মূলত আপনার ব্যবসার জন্য এটি একটি বিশাল স্বপ্ন। এটি লক্ষ্যে পৌছাতে আপনাকে প্রেরণা জোগাবে। নিচের কিছু মৌলিক প্রশ্নের উত্তর ঠিক করুন। আপনার উদ্দেশ্য ঠিক করতে সুবিধা হবে।
১. সবকিছু আপনার পরিকল্পনামত এগােলে আপনার ব্যবসা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? ২. কেন আপনি টিকে থাকবেন? ৩. আপনার উদ্যোগ কীভাবে আপনার চারপাশকে বদলে দেবে?
যে কোনাে উদ্যোগ স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে। তাই উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য আপনার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা থাকতে হবে। সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য আপনার কাছে পর্যাপ্ত তথ্য এবং কার্যপ্রণালী থাকতে হবে। তাই উদ্দেশ্য চূড়ান্ত করুন।
উদ্দেশ্য এক লাইনে কিংবা একটি অনুচ্ছেদও হতে পারে। জটিল বাক্য পরিহার করে লিখুন। এমনভাবে লিখুন যেন আপনার উদ্দেশ্য নিয়ে কারাে সাথে আলােচনা করার সময় সে যেন আপনার উদ্দেশ্য পড়ে বুঝতে পারে।
কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য দেখুন
চট করে আপনার উদ্যোগের উদ্দেশ্য নাও বলে দিতে পারেন। এ জন্য আপনি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য দেখুন। উদাহরণ হিসেবে গুগলের কথাই বলি। তাদের উদ্দেশ্য হল বিশ্বের তথ্যভাণ্ডার এক ক্লিকে প্রদান করা। আপনার নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য এ রকম উদ্দেশ্য চিন্তা করুন।
লক্ষ্য ঠিক করুন
যে কোনাে উদ্যোগের একটি লক্ষ্য থাকে। আপনার উদ্যোগের লক্ষ্য ঠিক রাখুন। একটি কোম্পানির লক্ষ্যে তার কাজ, বাজার এবং উদ্দেশ্যকে ফোকাস করা হয়। লক্ষ্য ঠিক করার সময় কিছু মৌলিক প্রশ্নের উত্তর বের করে রাখুন। ১. আপনার প্রতিষ্ঠান কী করে? ২. আপনার প্রতিষ্ঠান কার জন্য কাজ করে? ৩. আপনার প্রতিষ্ঠান কীভাবে কাজটি করে?
লক্ষ্য ঠিক রেখে আপনার উদ্দেশ্যের সাথে মিলিয়ে নিন। আপনার লক্ষ্য এক লাইনে সীমাবদ্ধ হতে পারে, আবার একটি পূর্ণাঙ্গ অনুচ্ছেদও হতে পারে। উদ্দেশ্যের মত লক্ষ্যও স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী হয়ে থাকে। লক্ষ্য ঠিক করার সময় আপনার ব্যবহারকারীদের কথা খেয়াল রাখুন, তারা যেন আপনার লক্ষ্য বুঝতে পারে।
গুগলের লক্ষ্য
গুগলের উদ্দেশ্য হল বিশ্বের তথ্যভাণ্ডার এক ক্লিকে প্রদান করা। আর তাদের লক্ষ্য আরাে নির্দিষ্ট। তাদের লক্ষ্য বিশ্বের তথ্যসমূহ সংগঠিত করা যেন এতে সবাই প্রবেশ এবং ব্যবহার করতে পারে। আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য এ রকম লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ঠিক করুন। খেয়াল রাখুন, আপনার কোম্পানির উদ্দেশ্য যেন সহজে মানুষ বুঝতে পারে।
বারাে মাসের পরিকল্পনা
আপনার আইডিয়াকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য বারাে মাসের পরিকল্পনা নিন। তাহলে লক্ষ্যে পৌঁছানাে সহজ হবে। কখন কী কাজ করলে আপনি কোথায় থাকবেন, তা বুঝতে পারবেন। আপনার প্রতিষ্ঠানের কাজ পর্যবেক্ষণ করতে সহজ হবে। এ পরিকল্পনা করার সময় কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিন।