নির্ভার মন ও মানসিক শক্তি
মৌলিক প্রবৃত্তি ও সহজাত বৈশিষ্ট্যগুলাের মধ্যে আনন্দ, উদ্বেগ, বিষাদ ও আতঙ্ক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। মানুষ নিজের প্রতি কোনােরূপ ঝুঁকির আশঙ্কা করলে স্বভাবতই দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা আর তীব্র আতঙ্কবােধ তাকে গ্রাস করে।আর আকস্মিক কিছু ঘটে যাওয়ার মতাে পরিস্থিতি হাজির হলে তাে শরীর হিম হয়ে যায়, তাপমাত্রা কমে গিয়ে উদ্বেগ বিস্ফোরিত হয় চোখে মুখে। বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটায় অনুভূতি, বেড়ে যায় হৃৎকম্পন। যেকোনাে খারাপ ঘটনা শুনে বা দেখেই এমনটা হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর নাম দেওয়া হয়েছে। Shock; বাংলায় যাকে বলা যেতে পারে অভিঘাত।কিন্তু 'Shock শব্দটিও পুরাে অবস্থার ভয়াবহতা পরিষ্কারভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে । মানসিক দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত মানুষের মধ্যে এমন এক অবস্থা সৃষ্টি হয়, যা বাহ্যিক অবয়বেও সহজে ধরা পড়ে। চিকিৎসাশাস্ত্রে তখন এটাকে বলে ইমার্জেন্সি অব লাইফ। সাইকোলজিক্যাল ক্রাইসিস pdfইংল্যান্ডে সার্জারির একটি উচ্চতর পরীক্ষায় প্রশ্ন করা হয়েছিল, ব্যথার সর্বোচ্চ পর্যায়ে রােগীর প্রথম চিকিৎসা কী হবে? শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করেছিল, কিন্তু মােক্ষম উত্তরটি এসেছিল একজনের কাছ থেকে-'A word of Comfort' অর্থাৎ সান্তুনামূলক কয়েকটি বাক্য।এ ধরনের রােগীর জন্য মহানবি ; চমক্কার একটি চিকিৎসার নির্দেশনা দিয়েছেন। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) তাঁর মুসনাদ গ্রন্থে আবু রামসা (রা.)-এর সূত্রে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।রাসূল বলেন-‘তােমার দায়িত্ব রােগীকে সান্ত্বনা দেওয়া, আরােগ্য দেওয়া তাে আল্লাহরই কাজ।' মুসনাদে আহমদ : ১৭৫২৭একাধিক হাদিসে নবিজির এই বক্তব্য নানাভাবে পরিব্যক্ত হয়েছে। এখানে একজন চিকিৎসককে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে, সে যেন রােগীর প্রতি অযথা কৌতুহল না দেখিয়ে তাকে সান্ত্বনা দিতেঅধিকতর মনােযােগী হয়। রােগীকে সাহস ও প্রবােধ দিয়ে শান্ত রাখার চেষ্টা করেন, যাতে তার মন থেকে উদ্বেগ ও ভয়ভীতি দূর হয়ে যায়।অসুস্থ ব্যক্তির মানসিক ধকল কাটিয়ে তুলতে এটিই সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসাপদ্ধতি। কোনাে মুসলমান ভাই অসুস্থ হলে মুমিন হিসেবে আপনার নৈতিক দায়িত্ব হলাে তার খোঁজ নেওয়া। সেবা শুশ্রুষা না হােক, নিদেনপক্ষে সান্ত্বনার বাণী নিয়ে হাজির হওয়া।আবু সাইদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন-“তােমাদের মধ্যে কেউ রােগীকে দেখতে গেলে তাকে প্রাণিত করাে, সাহস দাও। কেবল এতেই তার মনে শক্তি সঞ্চারিত হবে। ইবনে মাজাহ : ১৪৩৮আল্লাহর রাসূল ! কোনাে রােগীকে দেখতে গিয়ে প্রথমে তার রােগের অবস্থা, লক্ষণ প্রভৃতি জিজ্ঞেস করতেন। এরপর বলতেন-‘কোনাে ভয় নেই, শীঘ্রই তুমি সুস্থ হয়ে উঠবে, ইনশাআল্লাহ। বুখারি : ৩৪২০আপনার দেওয়া সামান্য সাহস ও সান্ত্বনায় দূর হয়ে যেতে পারে রােগীর মনের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা অজস্র দুর্ভাবনা আর উৎকণ্ঠা। সুতরাং অসুস্থ ব্যক্তির মনকে হালকা করার সুযােগ করে দিন। আল্লাহ চাইলে সে নিশ্চয়ই সুস্থ হয়ে উঠবে।
Social Plugin